শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

রাষ্ট্র ও দলীয় শক্তির নির্লজ্জ প্রয়োগ তবু ভরাডুবি আ.লীগের

স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাপশন যুক্ত করুন
প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির পরও ভরাডুবি ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ফলে দ্বিতীয় দফায় জয় পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে দলটি। এজন্য উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যে কোনো মূল্যে জয় ছিনিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে রাষ্ট্রশক্তি। এর সঙ্গে যোগ হয় আওয়ামী লীগের পেশিশক্তিও।
ক্যাপশন যুক্ত করুন

বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের গ্রেফতার, অপহরণ, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার মাধ্যমে সরকারের নির্লজ্জ মনোভাবের জানান দেয়া হয়েছিল নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকেই। ফলে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন ভোটাররা। ভোটডাকাতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতারাও।
গতকাল দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে এসব আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছে। দিনভর আওয়ামী লীগের ভোটডাকাতি দেখেছে দেশবাসী। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই বরিশাল সদর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। দিনব্যাপী চলেছে কেন্দ্র দখল ও জালভোটের মহোত্সব।
শীর্ষ নিউজ জানায়, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ১১৫টি উপজেলার মধ্যে রাত ১টা পর্যন্ত ১০৫ টির বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৫১টিতে। আর ৩৮টিতে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়া বিএনপির অন্যতম শরিক দল জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৮টিতে এবং জাতীয় পার্টি ১ টি। এছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ৭টি। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ব্যাপক তাণ্ডবের কারণে গতকাল দেড় শতাধিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে হয়েছে। ভোটডাকাতির প্রতিবাদে গতকাল অন্তত ১২টি উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। প্রথম দফায় ৯৭ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ৪৫, জামায়াত ১৩ ও আওয়ামী লীগ ৩৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করে।
কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, কারচুপি, ভোট বর্জন এবং সংঘর্ষসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে ১১৫ উপজেলায় ৮ হাজার ১৩৬টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। এর মধ্যে নোয়াখালী নির্বাচন স্থগিত করেছে প্রশাসন।
বিএনপি :৫১
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, জামালপুরের ইসলামপুর, নাটোরের লালপুর চট্টগ্রামের পটিয় ঢাকার সাভার, নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুর, নওগাঁ সদর, নওগাঁ বদলগাছি ও পত্নীতলা, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, সিলেটের বালাগঞ্জ, জয়পুরহাট সদর, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, বাগেরহাটের ফকিরহাট, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, মানিকগঞ্জের সদর ও হরিরামপুর, সুনামগঞ্জ সদর, পাবনার চাটমোহর, খুলনার ডুমুরিয়া, ঠাঁকুরগাঁওয়ের রানিশংকৈল, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, জামালপুরের বকসিগঞ্জ, নরসিংদীর শিবপুর, চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, পিরোজপুরের কাউখালী, নেত্রকোনার বারহাট্টা, লালমনিরহাট সদর, বগুড়ার আদমদিঘী ও শাহাজাহানপুর, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালা, ফরিদপুরের সালথা ও নাগরকান্দা, কুমিল্লার দেবিদ্বার, মেহেরপুরের মুজিবনগর ও গাংনি, যশোরের ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মাগুরার শালিখা ও মোহাম্মদপুর, বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের ও পেকুয়া, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, সুনামগঞ্জের সদর ও দিরাই এবং দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ:৩৮
জামালপুরের মেলান্দহ, রংপুরের বদরগঞ্জ, নওগাঁর নিয়ামতপুর ও সাপাহার টাঙ্গাইলের সখীপুর, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ, জয়পুরহাটের কালাই, মুন্সিগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের ভালুকা, গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালি পাড়া, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, চাঁদপুরের মতলব (উত্তর ও দক্ষিণ) , ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও খোকসা, ফরিদপুরের বোয়ালমারি, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও কমলাকান্দা, বরিশাল সদর, ফেনী সদর ও পশুরাম, নোয়াখালীর কবিরহাট, চাটখিল ও কোম্পানিগঞ্জ, ভোলার চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দীন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও বিরামপুর, কক্সবাজারের চকরিয়া, বাগেরহাটের কচুয়া, যশোরের শার্শা ও চৌগাছা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর এবং লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
জামায়াত: ৮
সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দিনাজপুরের চিড়িরবন্দর, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, রাজশাহীর বাঘা, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, বগুড়ার শিবগঞ্জ ও কাহালু, ঝিনাইদহের মহেশপুরে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
জাতীয় পার্টি: ১
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ।
অন্যান্য: ৭
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় জেএসএস প্রার্থী এবং খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ প্রার্থী, বান্দরবানের থানচি স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় জেএসএস (সন্তু লারমা গ্রুপ) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
বিদ্রোহী (বিএনপি):
পাবনার ভাঙ্গুরা ও নাটোরের গুরুদাসপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে নোয়াখালী সদর উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এছাড়া আরো ২৮টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন