সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ত্রিশালে কমান্ডো স্টাইলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জেএমবি সদস্যকে ছিনতাই

এক পুলিশ নিহত, আহত ২, গাড়িসহ এক সদস্য আটক

ত্রিশালে কমান্ডো স্টাইলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন জেএমবি সদস্যকে ছিনতাই

ময়মনসিংহ অফিস, ত্রিশাল, ভালুকা, সখিপুর, গাজীপুর ও কালিয়াকৈর সংবাদদাতা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, সোমবার, ১০:২৮




ত্রিশালে জেএমপি সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সমম্য গুলিতে নিহত (উপরে বাঁ থেকে) কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম, আহত কনস্টেবল সোহেল রানা ও এসআই হাবিবুর রহমান ; জেএমবি সদস্য জাহিদুল, রাকিব ও সালেহীন ; সখিপুরে গ্রেফতারের পর রাকিব হাসান ওরফে রাসে
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ডে কমান্ডো স্টাইলে ককটেল ফাটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে প্রিজন ভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির তিন সদস্য সালাহউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান ও বোমা মিজানকে ছিনতাই করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে ময়মনসিংহের একটি আদালতে হাজিরা দিতে ওই তিন আসামিকে নেয়ার সময় গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ কনস্টেবল আতিকুর রহমান (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন সুবেদার হাবিবুর রহমান (৪৫) ও সোহেল রানা (৩০)। তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মইনুল হকসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং রেড অ্যালার্ট জারি করেন। বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় তল্লাশি ও বিশেষ চিরুনি অভিযানে নামে। টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও কয়েকটি ককটেলসহ চালক জাকারিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। পরে চিরুনি অভিযান চালিয়ে রায়হান ও রাকিব হাসান ওরফে রাসেলকে তক্তারচালা বাজার থেকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। ছিনিয়ে নেয়া তিন জঙ্গিসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে বিশেষ অভিযান চলছে। নিহত পুলিশ সদস্যকে এক লাখ টাকা প্রদান করবেন। ঘটনার পর গোটা বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।
যেভাবে তিন আসামি ছিনতাই : গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে সকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির তিন জঙ্গি সালাহউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান ও বোমা মিজানকে ময়মনসিংহের আদালতে হাজিরা দিতে আনার পথে সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ডে পৌঁছলে সামনে চলমান একটি ট্রাক প্রিজন ভ্যানের গতি রোধ করে। একই সময়ে কালো রঙের একটি ভক্সি মাইক্রোবাস ও সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার প্রিজন ভ্যানের দুই পাশে এসে দাঁড়ায়। ওই দুই গাড়ি থেকে নেমে একদল জঙ্গি কমান্ডো স্টাইলে প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে উপর্যুপরি কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। একই সময় কয়েকজন জঙ্গি প্রিজন ভ্যানের সামনের গ্লাসে দু’টি গুলিবর্ষণ করে এবং চালক সবুজের কাছ থেকে প্রিজন ভ্যানের চাবি ছিনিয়ে নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রিজন ভ্যানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশ কনস্টেবল আতিক লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আরো দুই পুলিশ সদস্য সুবেদার হাবিবুর রহমান ও কনস্টেবল সোহেল রানা গুলিবিদ্ধ হন। এরপর জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানের তালা খুলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির তিন সদস্য সালাহউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান ও বোমা মিজানকে বের করে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। আর প্রাইভেটকারটি ত্রিশালের দিকে চলে আসে। ককটেল ও গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে আসে। লোকজনের ভিড় ভাড়ার আগেই জঙ্গিরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আহত কনস্টেবল সোহেল রানাকে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সুবেদার হাবিবুর রহমানসহ দুই জনকেই গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাবিবুরের পেটে ও সোহেল রানার পিঠে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে সুবেদার হাবিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রিজন ভ্যানচালক ও ইউপি সদস্য : প্রিজন ভ্যানচালক সবুজ সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুর থেকে আসার পথে ট্রাকটি প্রিজন ভ্যানের সামনেই ছিল। পেছনে ছিল দু’টি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার। ট্রাকটি সামনে থেকে প্রিজন ভ্যানের গতিরোধ করলে পেছন থেকে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ১৫-২০ জন দুর্বৃত্ত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুবেদার হাবিবুর রহমান জানান, সন্ত্রাসীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে এসে তাকে লক্ষ্য করে প্রথমেই গুলিবর্ষণ করলে তিনি আহত হন। পরে সন্ত্রাসীরা চালক সবুজের কাছ থেকে ভ্যানের চাবি নিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর কী হয়েছে আর বলতে পারব না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমিরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান জানান, সকাল সোয়া ১০টার দিকে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে ত্রিশালের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন তাকিয়ে দেখি একটি পুলিশের গাড়িকে সামনে ও পেছন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে একটি সাদা ও একটি কালো মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাস দু’টি থেকে ১০-১৫ জন কালো মুখোশধারী লোক পিস্তল দিয়ে গুলি করছে। আমি ঘটনাটি সাথে সাথে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদারকে জানাই। তিনি আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। আমি কাছে যাওয়ার আগেই তিনজন পুলিশকে গুলি করে তিনজন আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় পিস্তল হাতে মুখোশধারীরা। সামনের গাড়িটি সাদা রঙ ও পেছনের গাড়ি কালো রঙের ছিল। আসামিদের নিয়ে গাড়ি দু’টি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারা উত্তরের দিকে চলে যায়। আহত পুলিশদের আমি একটি গাড়িতে তুলে দেই। আসামিরা দু’টি বোমা ও অসংখ্য গুলি করে। পুলিশ সদস্যদের দু’টি বন্দুক আমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসি।
পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল সাইনবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের দু’টি বন্দুক পড়ে আছে। একটি বন্দুক ভাঙা। টাঁকশালের টাকা নেয়ার একটি খালি বাক্স পড়ে আছে। প্রিজন ভ্যানটির সামনের কাচে দু’টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। পেছনের দরজায় পুলিশের রক্তমাখা টুপি। আসামি ছিনতাইয়ের সময় তালাটি ভাঙা হয়, সেটি পড়ে আছে। পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।
যা বললেন পুলিশ সুপার : খবর পেয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মঈনুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ হাসপাতালে ছুটে যান। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, প্রিজন ভ্যানের সামনে একটি ট্রাক প্রথমে প্রিজন ভ্যানটিকে ব্যারিকেড দেয়। পরে কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা কয়েকজন সন্ত্রাসী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে এ ঘটনা ঘটায়।
স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়নি : ডিআইজি
বেলা ২টার দিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন হতাহতদের দেখতে। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত পুলিশ কনস্টেবল পরিবারকে এক লাখ টাকা ও আহতদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা হবে।
তিনি আরো জানান, জঙ্গিদের ময়মনসিংহে আনার বিষয়টি জেলা পুলিশ জানত না। কারাগার থেকে দুর্ধর্ষ আসামিদের স্থানান্তর করার সময় যে এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই এলাকার পুলিশকে অবহিত করতে হয়। এ েেত্র তা করা হয়নি।
তিনি জানান, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের পুলিশ এই বিষয়ে অবহিত ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপাররা জানিয়েছেন। নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আতিকের বাড়িতে আহাজারি : এ দিকে আতিকের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ আসর পুলিশ লাইনে নিহত আতিকের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত আতিক ময়মনসিংহ জেলা সদরে পোন ঘাগরার চুনখাই বাজার এলাকার আবু সাইদ শেখের ছেলে। তার জন্ম ১৯৮৫ সালে। তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে।
তিন আসামির পরিচয় : আদালত সূত্রে জানা যায়, ছিনতাই হওয়া জেএমবির সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ও রাকিব হাসান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও বোমা মিজান যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদেরকে মুক্তাগাছা থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নং ১৬(০৩)২০০৬ ও কোতোয়ালি থানার সিরিজ বোমা হামলা মামলা নং ৭(১২)০২সহ পাঁচটি মামলায় হাজিরা দিতে ময়মনসিংহে আনা হচ্ছিল।
জেএমবির শূরা সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির সূরা সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, পার্ট-১-এর কয়েদি। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার পাঠানবাড়ী গ্রামে। তাকে সর্বশেষ এ কারাগারে ২০১০-এর ২২ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর কারাগারে আনা হয়। সে ৩৩টি মামলার আসামি। এর মধ্যে ১০টি মামলার রায়ে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। রায়ে একটিতে মৃত্যুদণ্ডসহ অপর ৯টি মামলায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমা মিজান : জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমা মিজানকে (৩৫) ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সে জামালপুর জেলার শেখেরভিটা এলাকার সুজা মিয়ার ছেলে। সে ১৯টি মামলার আসামি। এর মধ্যে ২০০৯ এর ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর থানার একটি অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত (৩০ বছর)। এ ছাড়া দু’টি মামলায় ছয় বছর করে ও একটি ১৬ বছর ও একটি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত।
জেএমবি শূরা সদস্য রাকিব হাসান রাসেল : জেএমবি শূরা সদস্য রাকিব হাসান রাসেল জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার বেলতৈল গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে। সে ৩০টি মামলার আসামি। এর মধ্যে চারটি সাজাপ্রাপ্ত। একটিতে মৃত্যুদণ্ড ও অন্য তিনটিতে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
সখিপুরে মাইক্রোচালক জাকারিয়া আটক : ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা চালিয়ে ছিনতাইকৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির তিন আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, বোমা মিজান ও রাকিব হাসানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সখিপুরে প্রশিকা এলাকা থেকে তাদের সহযোগী জাকারিয়াকে (২৫) গাড়িসহ আটক করেছে সখিপুর থানা পুলিশ।
প্রত্যদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৬০৪৮) সাগরদিঘী-সখিপুর সড়কে ফিল্মি স্টাইলে ভাঙচুর করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় সখিপুর থানার সামনে পৌঁছলে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ-জনতা গাড়িটির পিছু নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঢাকা-সখিপুর সড়কের প্রশিকা এলাকায় গাড়িটি রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা গাড়িচালক জাকারিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ এ সময় গাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল, চারটি মোবাইল সেট ও রড কাটারসহ বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে। এ সময় মূল আসামিরা গাড়ি থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা সখিপুরের ও আশাপাশ এলাকায় চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।
তক্তারচালায় রাকিব ও রাসেল আটক : এ দিকে বিকেলে সখিপুরের তক্তারচালা নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে রাকিব ও রাসেলকে আটক করে পুলিশ। টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, রোববার বিকেলে মির্জাপুরের তক্তারচালা এলাকায় হেঁটে যাওয়ার সময় সন্দেহ হওয়ায় একজনকে আটক করা হয়। পরে তাকে জেএমবি সদস্য রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ (৩৫) হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ‘তার গলা, হাতে ও পায়ে ডাণ্ডাবেরির দাগ ছিল। এর সাথে সদ্য দাড়ি কামানো চেহারা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়।’
তদন্ত কমিটি গঠন : এ ঘটনায় অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান, ডিআইজি প্রিজন (সদর দফতর) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খায়রুল কবির মেনন এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ইফতেখারুল ইসলাম খান বলেন, কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাকিরা যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাদের ধরতে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। আশা করি শিগগিরই সবাইকে আটক করা সম্ভব হবে।’ এ ধরনের আসামিদের আনা-নেয়ার েেত্র আগামীতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহাফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ‘ত্রিশালের ঘটনার পর ময়মনসিংহ ও আশপাশ সব জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে রয়েছেন।’
অভিযান চলছে, ধরিয়ে দিলে পুরস্কার : ছিনিয়ে নেয়া জেএমবি সদস্যদের ধরতে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ছিনতাই হওয়া আসামিদের উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পলাতক আসামিদের জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য মাথাপিছু এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান। বাকি দুই জঙ্গিসহ পুলিশের গাড়িতে হামলাকারীরা যাতে পালাতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
এ দিকে অপহৃত তিন জেএমবি সদস্য ও তাদের ছিনতাইকারীদের আটকের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের আশপাশ জেলাগুলোয় বিশেষ করে টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় চালানো হয় ব্যাপক তল্লাশি। ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলা থেকে অপহৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেএমবির শূূরা সদস্য রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেলকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়।
বিভিন্ন কারাগারে রেড অ্যালার্ট : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। গতকাল ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর এই আদেশ জারি করা হয়। রাজশাহী কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে কারাভ্যন্তরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মামলার ২৫ জন আসামি রয়েছে। তাই যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারাভ্যন্তরে ও আশপাশ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ভেতরে ও বাইরে টহলসহ সার্বিক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
যশোরে কারাগার থেকে বোমা উদ্ধার
যশোর অফিস জানায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জেএমবির তিন আসামি ছিনিয়ে নেয়া এবং যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পাঁচটি তাজা বোমা উদ্ধার করার পর যশোরসহ খুলনা বিভাগের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের বাইরে ও ভেতরে সব কারারীকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে কারা কর্তৃপ। ঘটনার দিন থেকেই কারা অভ্যন্তরে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার আবদুস সালামকে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এক হাজার ৯১৯ জন ধারণমতাসম্পন্ন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে এক হাজার ৮০৪ জন বন্দী রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন জেএমবি সদস্য ও ৩৯ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে। এ ছাড়া খুলনা, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা কারাগারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জেএমবি আসামি আছে।
কারাগারের ব্যারাকে বোমা রাখার ব্যাপারে জেলার এ এস এম কামরুল হুদা বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের কারাগার পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। প্রশাসনকে বিব্রত করতে কারারীদের কেউ বোমা রাখতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ব্যারাকে কারারী ছাড়া আর কারো প্রবেশের অনুমতি নেই।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, পুলিশ বিভাগ কারাগার থেকে বোমা উদ্ধারের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের পর থেকে কারাগার থেকে আদালতে আসামি আনা-নেয়ার ব্যাপারে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়ন জেল সুপার আবদুস সালাম জানান, কারাগারে বোমা উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারা অভ্যন্তরে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন জেএমবি সদস্য ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা টিম। ত্রিশালে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের মধ্যে চট্টগ্রামের বোমা মিজানও রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ডেপুটি জেলার জাহেদুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বিশেষ টিম কাজ করবে। টিমের সদস্যরা চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে জেএমবির ১৫ সদস্য বন্দী রয়েছে। এর মধ্যে একজন সাজাপ্রাপ্ত বাকিরা হাজতি।
এ দিকে গতকাল দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের দেখতে আসা আত্মীয়স্বজনকে তল্লাশি করে কারাগার এলাকায় প্রবেশ করাতে দেখা যায়।
ভালুকায় ১২টি ককটেল উদ্ধার : গতকাল রাতে ভরডোবা-ঘাটাইল সড়কের ভালুকা উপজেলার উথুরা গ্রামে রাস্তার পাশে বস্তাভর্তি ১২টি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, উথুরায় রাস্তার পাশে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে পুলিশ এসে বস্তাটি খুলে ১২টি ককটেল উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে ত্রিশালের সাইনবোর্ড থেকে ছিনিয়ে নেয়া জেএমবির তিন জঙ্গিসহ ছিনতাইকারীরা ওই পথে পালানোর সময় বস্তাভর্তি ককটেলগুলো ফেলে রাখে। ভালুকা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ককটেলগুলো জঙ্গিরা ফেলে রেখেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিহত আতিকের লাশ দাফন : জেএমবির জঙ্গিদের ছিনতাইকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আতিকুল ইসলামের পরিবারে এখন চলছে মাতম। গতকাল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর উপজেলার গ্রামের বাড়ি চুরখাই পণঘাগড়ায় পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আশপাশের লোকজন তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ কোনো কথা বলছেন না।
নিহত আতিকের ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, আতিক তার ছোট ভাই। গাজীপুরে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিল। সাত বছর আগে সে পুলিশে চাকরি নেয়। আট বছর আগে ত্রিশাল উপজেলার রুদ্র গ্রামের আবদুস সোবহানের কন্যা সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। লাবিব (৬) ও অর্ণব (৪) নামে দুই ছেলে রয়েছে। গতকাল বাদ আসর পুলিশ লাইনে ও পরে গ্রামের বাড়িতে দু’দফা নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাক দাফন করা হয়েছে।
ডিআইজির ব্রিফিং : ঘটনা তদন্তে সন্ধ্যা ৬টায় সখীপুর থানায় আসেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান বিপিএম, পিপিএমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে ঘটনার বিষয়ে তিনি সন্ধ্যা ৭টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন।
তিনি জানান, প্রিজন ভ্যানের তালা ও আসামিদের ডান্ডাবেড়ি কেটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামি সালাহ উদ্দিন সালেহীন (৩৮), বোমা মিজান (৩৫) ও রাকিব হাসানকে (৩৫) ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাসে পালিয়ে যায়। তিনটি মাইক্রোবাসই জেএমবি সদস্যের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা বলে তিনি জানান।
ডিআইজি বলেন, এ ঘটনাটি জেএমবিদের পূর্বপরিকল্পিত। এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে তা আমাদের ধারণায় ছিল না। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া বাকি আসামিদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। অচিরেই জঙ্গিদের মূল উৎপাটন করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। এ ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা করা হবে বলেও তিনি জানান। দুই-এক দিনের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।
ত্রিশালে কয়েদির পোশাকসহ মাইক্রোবাস উদ্ধার
ময়মনসিংহ অফিস ও ত্রিশাল সংবাদদাতা জানান, ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যান থামিয়ে জেএমবির তিন জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার সময় জঙ্গিরা নানা কৌশল অবলম্বন করে। প্রিজন ভ্যানের চালক সবুজ মিয়া সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, জঙ্গিরা যে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেছে সেটিতে বনভোজনের ব্যানার লাগানো ছিল। তবে ব্যানারে কি লেখা ছিল তা তিনি বলতে পারেননি। এ জন্য মাইক্রোবাসটি আগে-পিছে গেলেও তার কোনো সন্দেহ হয়নি; কিন্তু পরে দেখা গেছে ওই মাইক্রোবাসে জেএমবির হামলাকারীরা ছিল। এ দিকে ঘটনার পরপরই যেসব সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেছেন তারা প্রিজন ভ্যান চালক সবুজকে সাদা পোশাকে দেখতে পান। ত্রিশাল থানার ওসি ঘটনাস্থলে আসার পর তিনি পোশাক পরেন।
এ দিকে গত রাত ১০টার দিকে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দোলনচাঁপা হলের (মহিলা হোস্টেল) পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় জেএমবি জঙ্গিদের ব্যবহৃত সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-২৬৮৮) উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাইক্রোবাসের ভেতরে ইংরেজিতে পিকনিক লেখা ব্যানার, ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত কালো পোশাক, কাটা কাটা হ্যান্ডকাপ ও ডাণ্ডাবেরি পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, মাইক্রোটি দুপুর থেকে ওইখানে দেখা যায়। তারা ধারণা করেছিল যে, মাইক্রোটি ঠিকাদারের; কিন্তু রাত গভীর হওয়ার পরও সেটি পড়ে থাকায় তাদের সন্দেহ হয় এবং পুলিশকে খবর দেয়। ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার ঘটনাস্থলে এসে মাইক্রোটি জব্দ এবং ভেতরে থাকা মালামাল উদ্ধার করেন।
দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশের কাছে জানতে চান আসামিরা ডাণ্ডাবেরি পরিহিত ছিল কি না। তখন একজন পুলিশ ডাণ্ডাবেরি পরা ছিল বলে দাবি করলেও সাইদুর রহমান নামে প্রত্যদর্শী এক ব্যবসায়ী বলেন, ঘটনার সময় তিনি বগারবাজার থেকে আসছিলেন। রাস্তায় গোলাগুলির শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ান। ঘটনাস্থলের প্রায় ৫০ গজ দূর থেকে তিনি দেখেছেন, প্রিজন ভ্যান থেকে পাঞ্জাবি ও কটি পরিহিত দুইজন নেমে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে কালো রঙের মাইক্রোবাসে উঠেন। তাদের কারো ডাণ্ডাবেরি ছিল না। কালো মাইক্রোবাসটি ঢাকার দিকে এবং সাদা মাইক্রোবাসটি ত্রিশালের দিকে চলে যায়।https://www.facebook.com/



কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন