শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভারতের চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার অভিযোগ

এবার বলিউডের চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্লগ ও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত চলচ্চিত্রটির নাম ‘গুন্ডে’। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ওই চলচ্চিত্রটি ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দির পাশাপাশি কলকাতায় বাংলা ভাষায়ও মুক্তি পায়।
গুন্ডে চলচ্চিত্রটি শুরুর প্রথমভাগেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভিডিও চিত্র দেখানোর পাশাপাশি হিন্দি ভাষায় বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় যুদ্ধ শেষ হয়। ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা হিন্দুস্তানের সেনাদের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। জন্ম হয় এক নতুন দেশ, বাংলাদেশ।

হিন্দিতে আরও বলা হয়, যখন হিন্দুস্তানের সেনারা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন কাঁটাতারের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল ১১-১২ বছরের দুই অনাথ বন্ধু বিক্রম ও বালা। তারা এটা বুঝতে পারছিল না, তাদের সাথে যা হলো তা কি ঠিক ছিল, নাকি ভুল। নতুন দেশ কি তাদের নতুন জীবন দেবে? তাদের চোখের সামনে শুধু এই প্রশ্ন ছিল। চলচ্চিত্রটির শুরুতে দেখানো হয়, ভারতীয় যোদ্ধাদের সামনে আত্মসমর্পণ করছেন পাকিস্তানি সেনারা? আর জন্ম হচ্ছে বাংলাদেশের। পেছনে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পোস্টার। উদ্বাস্তু শিবিরের সামনে দিয়ে রুটি ছুড়তে ছুড়তে চলেছে ত্রাণের গাড়ি, আর কাদামাটি থেকে তা কুড়িয়ে খাচ্ছে অসহায় মানুষ।
চলচ্চিত্রটিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখানো হলেও কোথাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়নি।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে গুন্ডে নিয়ে সমালোচনা চলছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ওই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা হয়েছে। জাহিদ কবীর হিমন এ বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভারতীয়রা মনে করতে পারে যে সবই তাদের অবদান। কিন্তু শুধুমাত্র আমরাই যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্যকে মনেপ্রাণে লালন করি তারা বলি যে, সব কৃতিত্ব মুক্তিবাহিনীর আর ভারত শুধু আমাদের সাহায্য করেছে।’
সিডাটিভ হিপনোটিক্স নামের একজন ফেসবুকে মুক্তিযুদ্ধের দলিল তুলে দিয়ে লিখেছেন, ‘৯০ হাজার পাকিস্তানি আর্মি ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেনি, করেছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর কাছে। এই কপিটা ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। প্রথমে গুন্ডে সিনেমার পরিচালকের বাসায়।’
আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘গুন্ডে ছবিতে বাংলাদেশিদের আবেগের ওপরে গুন্ডামি হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ আশা করছি।’
ফেসবুকের পাশাপাশি ব্লগগুলোতেও চলছে গুন্ডে চলচ্চিত্র নিয়ে সমালোচনা।
জাহিদুল ইসলাম জুয়েল নামের এক ব্লগার সামহয়্যারইন ব্লগে সমালোচনায় লিখেছেন, ‘....আমরা প্রত্যেকেই এই প্যারোডির অংশ। ১৯৪৭-৭১ সাল পর্যন্ত আমরা ছিলাম লুটেরা গুন্ডাদের হাতে। আমাদের দেশটা কোনো রকমে রক্ষা পেল নায়ক (!) ভারতের সহায়তায়। তারপর কী হলো? তারপর যে আমাদের রক্ষা করল, সেই ভারতই ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলা মায়ের ইজ্জতের ওপর। তাহলে মাতাল গুন্ডা নায়িকাকে যে উদ্দেশ্যে রক্ষা করল আর ভারত ১৯৭১-এ আমাদের যেজন্য সহায়তা করল, তাদের মধ্যে কি আসলেও কোনো পার্থক্য আছে? পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে ভারত নিজেই যেন তার ভোগ করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করল।...’




কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন