সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আল কায়দা নেতা জাওয়াহিরির কথিত বার্তা নিয়ে সংসদে আলোচনা : কূটনীতিকরা শিষ্টাচার বজায় না রাখলে সরকার কঠোর হবে

আল কায়দা নেতা জাওয়াহিরির কথিত বার্তা নিয়ে সংসদে আলোচনা : কূটনীতিকরা শিষ্টাচার বজায় না রাখলে সরকার কঠোর হবে

ডেস্ক রিপোর্ট



বাংলাদেশে কূটনৈতিক তত্পরতা চালানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য সংসদ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শিষ্টাচার বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
গতকাল জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ নেতা এমন হুশিয়ারি দেন। কূটনীতিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। কিসের মধ্যবর্তী নির্বাচন? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।’ শেখ সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে চারবার সাক্ষাত্ করেছেন। এসব সাক্ষাত্ করে কী এমন রাষ্ট্রীয় কাজ করেছেন? ষড়যন্ত্র করবেন না, ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। শেখ সেলিম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হবে না। শিষ্টাচার বজায় রেখে কাজ করুন, নচেত্ আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো।
বাংলাদেশ নিয়ে আল কায়দা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরির অডিও বার্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আল কায়দাপ্রধান জাওয়াহিরির অডিও বার্তা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করি।’ তিনি দাবি করেন, ‘এ বার্তায় যে কথা বলা হয়েছে তা জামায়াতে ইসলামীর কথার মতোই। তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়। বিএনপি-জামায়াত তালেবানের দোসর। আগে তারা যে কথা বলেছে, তাদের কথার সঙ্গে জাওয়াহিরির কথার মিল আছে।’ বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ একটি বৃহত্ কারাগার। বাংলাদেশে মুসলমানদের
গণহত্যা করা হয়েছে। এসব কথা আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। খালেদা জিয়া জাওয়াহিরির কাছে এসব তথ্য পাঠিয়েছেন’ বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শেখ সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকারভাবে ধর্মপ্রাণ। জাওয়াহিরির বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধেরও বিরুদ্ধে। এ দেশের মানুষকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারাই এ ধরনের কথা বলতে পারে। বিএনপি-জামায়াত- হেফাজত-তালেবান জঙ্গি সংগঠন। তারা কোনো গণতান্ত্রিক সংগঠন নয়।’ তিনি বলেন, গত বছর হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসেবে।
তিনি বলেন, গত ৫ মে হেফাজতের সমাবেশের সময় চারদিকে আগুন লাগানো হয়েছে। বায়তুল মোকাররমে কোরআন পুড়িয়েছে। এ আগুন নাকি স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেবাশীষ লাগিয়ে দিয়েছে। এম. কে. আনোয়ার একথা বলে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এখন নাকে খত দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে এসেছে।
মতিয়ার দাবি জাওয়াহিরি তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইমকে উদ্ধৃত করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ২০০১-২০০৬ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল তখন জাওয়াহিরি তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল। সরকারি বদান্যতায় যে এটা হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, এই জাওয়াহিরি তাদের (বিএনপি-জামায়ত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার) তত্ত্বাবধানে তিন তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল। জাওয়াহিরির বক্তব্য তখন এলো, যখন লেডি লাদেন খালেদা জিয়ার নির্বাচন বানচাল করার প্রতিরোধ করার কর্মসূচি ব্যর্থ হলো। এটা হলো মনোবল চাঙ্গা কর্মসূচির অংশ। বেগম সাহেব খেমা দেন। জাওয়াহিরি সাহেব—গেরিলা আমরা, আপনারা না। ওই ভাষণ পর্যন্ত! এটা বাংলাদেশ, রাজাকাররা হারবে, গেরিলারা জিতবে, বলেন মতিয়া চৌধুরী।
জামায়াত, শিবির ও হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি বলেন, শিগগিরই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যেখানে জামায়াত-শিবির ও হেফাজত দাঁড়াবে, সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পয়েন্ট অব অর্ডারের আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মাইন উদ্দিন খান বাদল, ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।
 

বাংলানিউজ26.com



 

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন