বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ক্যাম্পাসে সিনেমার অশ্লীল শ্যুটিং!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হলের সামনে বাণিজ্যিক সিনেমার শ্যুটিং নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসের কার্জন হলে সিনেমার শ্যুটিং নিয়ে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করছেন।শিক্ষার্থীদের দাবি, পরীক্ষা চলাকালে হলের ঠিক সামনেই শ্যুটিংটি চলছিল এবং অশ্লীল গানের দৃশ্যায়নও করা হচ্ছিল। এটা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্ন করবে।
জানা যায়,গত শনিবার সকালে বাণিজ্যিক ধারার ‘বন্ধু যে তুমি’ চলচ্চিত্রের কয়েকটি মারপিটের দৃশ্য ও গানের শুট নেয়া হয়। এক পর্যায়ে পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক শিক্ষক এসে তাদের বাঁধা দেন। এ সময় কথাকাটাকাটি হলে ছাত্রদের তোপের মুখে তারা সরে যেতে বাধ্য হন। পরে ছাত্ররা এক পর্যায়ে কার্জন হলের সামনে করা সকল দৃশ্য মুছে ফেলার দাবিও জানান।



প্রত্যক্ষদর্শী ঢাবি’র ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন-অর-রশিদ রাসেল পরিবর্তনকে বলেন, “কার্জন হলের প্রধান পরীক্ষা হলের একদম সামনেই শ্যুটিং হচ্ছিল। এ সময় একটা ব্যাচের পরীক্ষাও চলছিল। আর এ সময় যদি নাচ-গানের দৃশ্যায়ন হয় তাহলে মনোযোগ ওই দিকে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর এতেই শিক্ষার্থীরা শ্যুটিং বন্ধ করতে বলে। কিন্তু শ্যুটিং ইউনিট সেটা মানতে নারাজ। তারা ডিনের কাছ থেকে নেয়া একটি অনুমতি পত্র দেখায়। তবে সেটা কোন বিভাগের ডিন দিয়েছেন এটা বলতে পারেনি। ক্যাম্পাসে শ্যুটিং হতে পারে। তবে তা যেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষার পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে। এ কারণেই ঐতিহ্যবাহী এ ক্যাম্পাসে অবাধ শ্যুটিং করতে দেয়া হয় না।”
রাসেল বলেন, “দেশের সবোর্চ্চ এই বিদ্যাপীঠে শ্যুটিংয়ের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত যে শিক্ষার্থীদের যেন কোন অসুবিধা না হয়। বা ক্লাস-পরীক্ষা বিঘ্নিত না হয়। আর অশ্লীল নাচ-গানেরতো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে এ ধরনের শ্যুটিং বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আসছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা যেন এই ধরনের অসুবিধার মুখোমুখি না হয়। বেশকিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের মতো প্রতিবাদও জানিয়েছে।”
ফলিত পদার্থের আরেক শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম সৈকত পরিবর্তনকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিনেমা-নাটকের শ্যুটিং হোক সমস্যা নেই। তবে সেগুলো যেন অবশ্যই মানসম্মত সুস্থ ধারার হয়। পাশাপাশি ক্লাস-পরীক্ষার সময় শ্যুটিংয়ে যেন আমাদের কোন ডিস্টার্ব না হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে।”
পরীক্ষার হলের সামনে গান ও অ্যাকশনের দৃশ্য ধারণ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়েই ফেসবুকে চলে সমালোচনার ঝড়। যেখানে সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্য সহযোগিতা করার কথা সেখানে সমালোচনার কারণ হিসেবে অনেকেই নিম্নমানের সিনেমাকে দায়ী করেছেন। তথাকথিত ফর্মূলার ছবিতে কার্জন হলকে ব্যবহার করতে তাই শিক্ষার্থীদের আপত্তি। শুধু কি শিক্ষার্থীদের আপত্তি,সম্ভবত সকল সিনেমা সচেতন নাগরিকও তা চাইবেন।
শহিদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী হুসাইন আহমেদ সোহান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,বিএফডিসিতে পরিণত হতে যাচ্ছে আমাদের সবার প্রিয় কার্জন হল! এখানে পড়াশুনা হয়না,এখানে নাচ-গান হয়। দেশের স্বনামধন্য তারকারা কোমর দোলানোর জন্য বেছে নিয়েছেন কার্জনকে।
মিশু কাজী নামের একজন মন্তব্য করেছেন, “এটা ছিল…মৃগী রোগাক্রান্ত সার্কাস পার্টি।”
আর প্রজাপতি রং নামের একজন লিখেছেন, “লাঠি দিয়া দাবড়ানি দিয়া বের করে দেন এইসব Down Market ৩ টাকার নাচনেওয়ালিদের। মন্তব্য ছাড়াও শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করতে যেনো না পারে সেব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান করেছে।”
এ ব্যাপারে কার্জন হলের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খোরশেদ আহমেদ কবির পরিবর্তনকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গর্ব। আর এই গর্বের প্রতিষ্ঠানটিতে শুটিং হতেই পারে। শ্যুটিংয়ের জন্য ভিসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে পরীক্ষা বা ক্লাস চলাকালিন সময়ে শ্যুটিং না করাটাই ভালো। অনেক সময় ভিসিকে ভুল তথ্য দেয়া হয় যে, কোন পরীক্ষা চলছে না। ফলে শ্যুটিংয়ে নেমে যায় তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। এছাড়াও অশ্লীল দৃশ্যের দৃশ্যায়ন ক্যাম্পাসের মতো জায়গায় কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক পরিবর্তনকে বলেন, “বিশ্বের সব দেশেই প্রসিদ্ধস্থানগুলোকে তুলে ধরার জন্য সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরাও চাই আমাদের গর্বের জিনিসগুলো আমাদের সিনেমায় উঠে আসুক। আমি জানি না সেই গানের দৃশ্যগুলি কেমন ছিল। তবে অশ্লীল গানের দৃশ্যায়নে আমাদের ঐতিহ্যের স্থানগুলোকে না জড়ানোই সবচেয়ে ভালো হবে। আর শিক্ষার্থীদের যেন ডিস্টার্ব (বিরক্ত) না হয় এটা-তো মাথায় রাখতেই হবে।”
যাকা/আরএ/এলআর




কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন