শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সংক্রামক যৌনরোগ এড়িয়ে চলুন, সুস্থ থাকুন

সংক্রামক যৌনরোগ এড়িয়ে চলুন, সুস্থ থাকুন

253ঢাকা : যে সমস্ত
রোগ জীবাণু দ্বারা হয় এবং নারী-পুরূষের দৈহিক মিলনের মাধ্যমে ছড়ায় সেগুলিই সংক্রামক যৌনরোগ। গ্রীক প্রেমের দেবী ‘ভেনাস’এর নামানূযায়ী সংক্রামক যৌনরোগগুলিকে ডাক্তারী ভাষায় অতীতে ‘ভেনারিয়েল ডিজিজ (ভিডি)’ বলা হতো। সম্প্রতি এ নামটি পরিবর্তন করে এটাকে নতুন নামকরণ করা হয়েছে -’সেক্সচুয়ালী ট্রান্সমিটেড ডিজিজ(এসটিডি) বা সংক্রামক যৌনরোগ’। অতি আধুনিকতা, নৈতিক অবক্ষয় ও অন্যান্য নানাবিধ কারণে মারাত্বক সংক্রামক যৌনরোগগুলি সারাবিশ্বেই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, বাংলাদেশে এখন নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচচবিত্ত সব সমাজেই যৌনউচ্ছৃঙ্খলতা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পতিতাবৃত্তি এবং বিদেশে আসা-যাওয়াও বহুগুনে বেড়েছে। আর সেইসাথে আশংকাজনকভাবে বাড়ছে মারাত্বক সব সংক্রামক যৌনরোগগুলিও। আর আমাদের দেশে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, দারিদ্রতা ও কুসংস্কারের কারণে এরোগগুলি আরো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে, চিকিৎসা না করে রোগ পুষে রাখার কারণে। অথচ অধিকাংশ কমন সংক্রামক যৌনরোগেরই আজকাল খুব ভাল চিকিৎসা রয়েছে।
কি দ্বারা হয় ঃ সংক্রামক যৌনরোগ বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। জীবাণুগুলি আবার ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, প্রোটোজোয়া, ক্লামাইডিয়া, প্যারাসাইট ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের হতে পারে। একেক জাতের একেকটি জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে একেকটি নির্দিষ্ট নামের রোগ সৃষ্টি করে।
কিছু উদাহরণ ঃ প্রচুর সংক্রামক যৌনরোগ রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সিফিলিস, গনোরিয়া, স্যানক্রয়েড, গ্রানুলোমাইনগুইনালী, লিমফোগ্রানুলোমাভেনারিয়াম, হারপিস প্রোজেনিটালিস, ট্রাইকোমোনিয়েসিস, ক্যান্ডিডিয়েসিস, এইডস ইত্যাদি ।
কিভাবে হয় বা ছড়ায় ঃ সংক্রামক যৌনরোগগুলি সাধারণত নারী-পুরুষের যৌনমিলনের মাধ্যমে একজনের দেহ হতে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। এই সকল রোগের জীবাণুু বহনকারী যে কোন নারী বা পুরুষের সাথে যেই মিলিত হবে, তারই ঐ জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও যদি যে কোন একজন এসব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হন, তবে অপরজন বিনাদোষেই নিজের অজান্তে এ ধরনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, যৌন সংক্রামক রোগগুলি প্রধানতঃ যৌনমিলনের মাধ্যমেই ছড়ায়, তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে, যেমন- রক্তসঞ্চালন, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ইত্যাদির মাধ্যমেও এ সমস্ত রোগ ছড়াতে পারে। ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং কাপড়-চোপড়ের মাধ্যমেও কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন রোগ ছড়াতে পারে।
যৌন সংক্রামক রোগের লক্ষণ ঃ একেকটি সংক্রামক যৌনরোগের লক্ষণ একেক রকম। তাই, সবগুলি রোগের লক্ষন এখানে পৃথকভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে একথা বলা যায় যে, সংক্রামক যৌনরোগ হলে, অধিকাংশ নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেই লক্ষণসমূহ নি�েœাক্ত তিন ধরনের মধ্যেই হয়ে থাকে। সেগুলি হল-
১. যৌনাঙ্গ বা তার আশে-পাশের ত্বকে দানা, গোটা, ঘা, ফোলা, ব্যাথা, চুলকানী ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন।
২. পুরুষের বেলায় প্র�্রাবের নালীতে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে প্র�্রাবের নালী এবং যোনীপথ এ দু’টির যে কোন একটি অথবা একই সাথে উভয়টিতে জ্বালা-পোড়া, ব্যথা-চুলকোনী ইত্যাদি।
৩. পুরুষের বেলায় প্রস্রাবের নালী দিয়ে আর মেয়েদের বেলায় প্র�্রাবের নালী এবং যোনীপথ এ দু’টির যে কোন একটি বা উভয়টি দিয়ে পুঁজ বা পুঁজ জাতীয় কোন তরল পদার্থ বের হওয়া। এখানে কয়েকটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাহলো –
এক; একই সাথে একের অধিক সংক্রামক যৌনরোগে আক্রান্ত হলে লক্ষণ ও একই সঙ্গে বিভিন্ন রকম পাওয়া যেতে পারে। দুই; একই রোগের লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে একই রকম নাও হতে পারে। তিন; কিছু কিছু সংক্রামক যৌনরোগ পুরুষের বেলায় এবং কিছু সংক্রামক যৌনরোগ মহিলাদের বেলায় তেমন কোন কষ্ট বা লক্ষণ সৃষ্টি করে না। যা নিজের এবং মিলন সঙ্গী/সঙ্গীদের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। কারণ, সমস্যা না থাকায় রোগী চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করে না। ফলে, সে নিজেও মনের অজান্তে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে এবং মিলন সঙ্গী/সঙ্গীদেরকেও এরোগ ছড়াতে থাকে। এ অবস্থায়, ল্যাবরেটরী পরীক্ষাই রোগ নির্ণয়ের প্রধান উপায়।
চিকিৎসা: সংক্রামক যৌনরোগের চিকিৎসা এবং এর ফলাফল সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কি জাতীয় জীবাণু দ্বারা রোগটি হয়েছে তার উপর। বর্তমানে একমাত্র ভাইরাস ছাড়া অন্যান্য সকল জীবানু (যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, প্রোটোজোয়া, ক্লামাইডিয়া, প্যারাসাইট ইত্যাদি) দ্বারা সৃষ্ট রোগই শতকরা একশতভাগ নিরাময় যোগ্য। শুধু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ (যেমন-এইডস্) এখনও পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। আমাদের দেশে যে যৌনসংক্রামক রোগগুলি সবচেয়ে বেশী হয়, তার অধিকাংশই পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। তবে, উপযুক্ত ওষুধ এবং ওষুধের পূর্ণ কোর্স করা এর পূর্বশর্ত। যদি ভুল ঔষধ ব্যবহার করা হয় অথবা সঠিক ওষুধই পরিমাণমত এবং নিয়মিত ব্যবহার করা না হয়, তবে শরীরের ভিতর জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে, যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া পরবর্তী জীবনে ভয়াবহ পরিনতির সৃষ্টি করতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পুরূষ বা মহিলা বন্ধাত্বেরও অন্যতম কিছু কারণ হচেছ, যৌনসংক্রামক রোগ।
উপদেশ: যৌনসংক্রামক রোগ হয়েছে বলে কোন প্রকার সন্দেহ দেখা দিলে, জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে একজন উপযুক্ত যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তা মিটিয়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। উল্টোদিকে, তা পুষে রাখলে, নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় এবং অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পারিবারিক বা সামাজিক ক্ষতিও করা হয়। লাজ-লজ্জা, ভয়-ভীতি ইত্যাদি সঠিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এক বিরাট বাধা, যা রোগীর নিজ স্বার্থেই ত্যাগ করা উচিৎ। কারণ, জীবাণু লাজ-লজ্জা, ভয়-ভীতির অজুহাতে ঘুমিয়ে থাকবে না। বরং সে তার ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপ সংগোপনে শরীরের ভিতরে চালিয়ে যাবে, যতদিন না উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

কোন মন্তব্য নেই :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন